তরুণরা কিভাবে বিনোদন প্লাটফর্মকে ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারে
- উম্মে সালমা তারিন
- ০২ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে প্রযুক্তি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। যদিও এই সময়ে আমাদের মনোযোগ সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে রেখেছে ডিভাইসের স্ক্রিন, আমরা প্রতিদিন যে ধরনের কনটেন্ট দেখি সেগুলো আমাদের মনে শক্তিশালী দাগ কেটে রাখে। আর এখানেই সফল বিনোদন প্লাটফর্মগুলো, সেগুলো আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা তাদের বিভিন্ন ধরনের টুলের মাধ্যমে অন্যদের সাথে সংযুক্ত করে এবং আমাদের বাস্তবতা সম্পর্কে উপলব্ধি করতে দেয়। আসলে এসবের মধ্যে দিয়ে প্লাটফর্মগুলো এমন একটি প্রভাব বিস্তার করে, যেখানে আমরা একটি ভার্চুয়াল মাধ্যমের মধ্য দিয়ে অনুভূতিগুলো একে অন্যের সাথে ভাগ করে নিই।
ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লাটফর্মগুলো সবার জন্যই, এমনকি কিশোরদেরও ইন্টারনেটে বিশ্বের সম-আগ্রহী মানুষের সাথে সংযুক্ত করেছে। এ ক্ষেত্রে বলা যায় টিকটক বিনোদন প্লাটফর্ম হিসেবে ট্রেন্ডসেটার হয়ে উঠেছে, সেই সাথে হয়ে উঠেছে সব বয়সী ক্রিয়েটরদের জন্য স্বাধীন মত প্রকাশের মাধ্যম। সম্প্রতি এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে, যেখানে ২০২১ সালে ৬৫৬ মিলিয়ন ডাউনলোডের রেকর্ড গড়েছে। বিশ্বে তারকা হিসেবে পরিচিত এবং উপমহাদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিরা সক্রিয়ভাবে এখন ভিডিও কনটেন্ট শেয়ারিং প্লাটফর্মটি ব্যবহার করছেন।
বিনোদন প্লাটফর্মগুলো এখন জীবনের একটা অংশ হয়ে উঠেছে। এখনকার কিশোর-কিশোরীদের অন্যদের সামনে নিজেদের প্রকাশ করার অন্যতম মঞ্চ হিসেবে কাজ করছে বিনোদন প্লাটফর্মগুলো। তাদের সৃজনশীল অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে প্লাটফর্মটিতে গান, নাচ, বিভিন্ন ধরনের খেলার ভিডিও, এমনকি তাদের পেইন্টিংয়ের ছবিও আপলোড করতে পারছে। একই ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আগ্রহী তরুণরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে।
বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানরা কাদের সাথে অনলাইনে মেলামেশা করছে তার ধারণা পেতে পারেন বিভিন্ন বিনোদন প্লাটফর্মে থাকা নানা ধরনের নিরাপত্তা ফিচারের সাহায্যে। তাদের ছেলে-মেয়েদের একটি নিরাপদ ও বন্ধুত্বপূর্ণ ভার্চুয়াল পরিবেশ দিতে পারেন।
এ বিষয়ে, টিকটক একটি চমৎকার কাজ করেছে বাংলাদেশে তাদের সেফটি ফিচার সেন্টার উন্মোচন করে। সেখানে টিকটকের সেফটি ফিচারের নীতিমালা এবং রিসোর্সগুলো বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় দেয়া হয়েছে। প্লাটফর্মটির বহুমুখী কমিউনিটির জন্য সেফটি সেন্টারটি একটি ওয়ান স্টপ সল্যুশন হিসেবে কাজ করে। সেখানে রয়েছে বেশ কিছু খুব উপকারী ফিচার, যেমন- ‘প্যারেন্টাল গাইড’, ‘রেস্ট্রিক্টেড মোড’ ও ‘স্ক্রিন টাইম ম্যানেজমেন্ট’ যা অভিভাবকদের তার সন্তানরা কি করছে সেটি নজরদারি করতে দেয়।
টিকটক বাংলাদেশে নিজেদের সেফটি অ্যাম্বাসেডর প্রোগ্রাম চালু করেছে। জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী-অভিনেতা তাহসান খান এবং স্বনামধন্য অভিনেত্রী দিলারা হানিফ পূর্ণিমা টিকটক পরিবারের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তারা টিকটকের ফিচারে ফ্যামিলি পেয়ারিং মোড চালু করতে সহায়তা করেছেন, যা বাবা-মাকে তাদের সন্তানদের অ্যাকাউন্টের সাথে লিঙ্ক বা যুক্ত করতে দেয়। এর মধ্যে দিয়ে মা-বাবারা শুধু তার সন্তানদের অ্যাকাউন্টটিতে নজরদারি করতে পারে না, সাথে তার সন্তানদের কে ম্যাসেজ পাঠাতে পারবেন সেটিও নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন।
এ ছাড়াও টিকটক শীর্ষস্থানীয় নলেজ শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইয়ুথ পলিসি ফোরামের সাথে যৌথভাবে ইন্টারনেট সেফটি বিষয়ে কর্মশালা আয়োজন করেছে। তারা এভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আরো কর্মশালা আয়োজন করছে, যেগুলোতে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।
ক্রিকেট বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। স্পিডস্টার তাসকিন আহমেদ নিয়মিত টিকটকে কনটেন্ট তৈরি করছেন, তার ফ্যানরা তাসকিনের লাইফস্টাইলসহ নানা কিছুই নজরে রাখেন। তার ফিট থাকাসহ সুস্বাস্থ্যের জন্য কী কী করেন সেসব অভ্যাসগুলোও টিকটকের কনটেন্ট থেকেই জানতে পারেন অনেক কিছু।
কিশোর-কিশোরীরা তাদের চারপাশের বিশ্ব সম্পর্কে জানতে এই ভার্চুয়াল প্লাটফর্মকে ব্যবহার করতে পারেন, অনেকেই অনলাইনে ছোট অনুপ্রেরণামূলক গল্প পড়ে কিংবা সাধারণভাবে ছোট ভিডিও ডকুমেন্টারি কিংবা ভিডিওর সাহায্যে নিজেদের সাম্প্রতিক ট্রেন্ডগুলোর সাথে আপ-টু-ডেট রাখেন।
সামাজিক মাধ্যম প্লাটফর্মগুলো শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে পারে, বোঝাপড়ায় খুব স্বচ্ছতা আনতে পারে এবং অন্যদের সংস্কৃতির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে সহায়তা করে। তারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নানামুখী সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে, অসংখ্য তথ্য জানতে ও যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে পারে।
তরুণরা সাম্প্রতিক বিশ্ব সম্পর্কে জেনে নিজেদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে জ্ঞানী করে তুলতে পারে, প্লাটফর্মের মাধ্যমে একই মানসিকতার ব্যক্তিদের সাথেও মিশতে পারে, সেই সাথে গ্লোবাল নানা বিষয়ে জানতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্লাটফর্মগুলো এখন দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। অবশ্য এখানে থাকার জন্য কিশোর-কিশোরী ও তাদের বাবা-মায়েদের উচিতসতর্ক দৃষ্টি রাখা। আপনি কোন ধরনের কনটেন্ট ব্যবহার করছেন, প্লাটফর্ম কীভাবে কাজ করে এবং আপনি মাধ্যমটিতে কতটা সময় ব্যয় করছেন তার ওপর নজর রাখা। সেই সাথে অবশ্যই প্রয়োজন আপনার ও আপনার বসন্তানের সুস্থতা, মানসিক স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করা এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা।
লেখক : পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়ের সহকারী অধ্যাপক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা